বৌদিমনি



সেন বাড়িতে এই ক'মাস হল কাজ নিয়েছে পারুল...। খুব চটপটে, একাহাতে বাড়ির সমস্ত কাজ সামলে নেয় সে..। এখন এমন হয়ে গেছে যে, পারুল ছাড়া সেন বাড়ি চোখে অন্ধকার দেখে...।
দাদাবাবু কাজ থেকে ফিরলে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে আসা, প্রতিদিন মনে করে আগে থেকে গিজার চালিয়ে রাখা যাতে দাদাবাবু গরম জলে হাত-পা ধুতে পারেন, গরমাগরম চা বানিয়ে দেওয়া সঙ্গে আমতেল সহযোগে মুড়ির চাট বানিয়ে দেওয়া...মোট কথা এককথায় বলতে গেলে অদিতিকে এখন আর কোনও দিকে তাকাতে হয়না , খুব ভাগ্য করে সে এতদিন পরে একটা কাজেরমানুষ পেয়েছে, তাও আবার এই যুগে...।
বৌদিমুনিকে নিয়ে পারুলের অত মাথাব্যথা-ট্যাথা নেই...বৌদিমুনি খুব মাই ডিয়ার মানুষ..। সে অতবার কলিংবেলও বাজায় না...অত রাগী রাগী মুখ করেও থাকেনা...ধীরেসুস্থে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেই হল...। বৌদিমুনি এলে তাকে চা দিতে হয় কিনা..? জল খাবার খাবে কিনা এসব জিজ্ঞাসা করতে হয় কিনা..? এসব ব্যাপার তার জানাও নেই...আর তার মাথাতেও কখনো আসেনি...। বরং উলটে বৌদিমনি কাজ থেকে ফিরে হাত পা ধুয়ে পারুলের সাথে কাজে লেগে পরে...। সে রুটি বেললে অদিতি রুটিগুলো চটপট সেঁকে দেয়...না হলে সে একাহাতে বেলবে,সেঁকবে,অনেকটা সময় লাগবে..., গ্যাসের যা দাম বেড়েছে...একটু হাতে হাতে করে দিলে কিছুটা সাশ্রয় হয়...। বৌদিমুনি থাকলে পারুলের অনেকখানি সুবিধে হয়, হাতে হাতে করে দিয়ে অনেকটা কাজ এগিয়ে দেয়..।


পারুল ক'দিন ধরে লক্ষ্য করছে, দাদাবাবু বেশ কিছুদিন হল কাজে বেরুচ্ছে না...প্রতিদিন চেপে রেখে রেখে আজ সে বলেই ফেললো,বৌদিমুনি দাদাবাবু আপিস যায়না আর..?
অদিতি বলল..., না,আসলে দাদাবাবুদের ফ্যাক্টরি টা বন্ধ হয়ে গেছে...।
পারুল বলে, সে কি গো বৌদিমুনি..!!! তাহলে তো আমারও আর কাজটা থাকবেনিগো...!!!
কেন? তোমার কাজ থাকবেনা কেন..?
কি কও বৌদিমুনি? দাদাবাবুর চাকরিবাকরি না থাগলে আমার কি করে থাকে..? মাইনে দেবে কেমনে..??
কেন তোমার এতে চিন্তা কিসের? তোমার মাইনে তো আমি দিই..!!
তুমি দাও....!!!
হ্যাঁ...আবার কে?
আমি ভেবেছিলুম দাদাবা.......
বৌদিমুনি আমি যদি সজ্ঞানে-অজ্ঞানে কিছু ভুল করে থাকি,কোন অসম্মান করে থাকি আমায় ক্ষমা কোরোগো....
কি ভুল করেছো..? আমারতো সেরকম কিছু মনে পরছে না পারুল...
না, বলছিলুম তোমায় কক্ষুনো যত্ন আত্তির করা হলুনি...
দূর পাগলি..! আমি কি বাচ্চা না অসুস্থ? যে আমায় যত্ন করবি..?
না গো বৌদিমুনি, অফিস থেকে এলে কক্ষুনো তোমায় জিগাসা করা হয়নি তুমি চা খাবে কিনা..? তোমার খিদে পেয়েচে কিনা..? তোমার গরম জল লাগবে কিনা?
হ্যাঁ,তাতে কি হল..?
না বৌদিমুনি আমি বড় ভুল করে ফেলিছি....


এতে তোর দোষ নেই পারুল...এসব আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে...।সমাজটাই তো এমন...।ছোটবেলা থেকে আমাদের মা,কাকি,দিদা, ঠাম্মা এসবই শিখিয়ে গেছে যে সবসময় বাড়ির পুরুষমানুষদের তোয়াজ করে চলতে হয়...বাড়ির মেয়ে-বৌদের দিকে না তাকালেও চলে...পুরুষ মানুষের যত্নের যেন কোনো ত্রুটি না হয়...। তাদের মতে, মেয়েরা এলেবেলে, বাণের জলে ভেসে আসে...তারা যতই যোগ্যতর হোক না কেন...,বাড়ির পুরুষমানুষদের তুলনায় তারা সবসময় কয়েক ধাপ নীচে...। এটা তোর একার ভুল নয় পারুল...এই ধারণা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের শিরায় শিরায়, রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গিয়ে স্নায়ুতে স্নায়ুতে প্রবাহিত হয়ে চলেছে...

Thank you for reading, please share this topic.

Comments

Popular posts from this blog

বেসরকারী করনের পথে 4 টি সরকারি ব‍্যাঙ্ক

মুখোশ এর আড়ালে

Shopping