শেষ ইচ্ছে
থাইরয়েডের ক্যাপসুল খাওয়ার সময় অমর বাবু তার স্ত্রী অনুপমাকে বললেন "৩বছর আগে মায়াপুর যাওয়ার বাস ছেড়েছিল।৫০০ টাকা চাঁদা।তাই যাইনি।আর হয়তো যাওয়ায় হবে না।সারা জীবন শুধু অর্থ উপার্জন ই করে গেলাম। নিজের ইচ্ছে আর পূর্ণ হল না।"বালিশ ছাড়তে ছাড়তে অনুপমা বলল "আমি তো সংসারের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। আমার ও ইচ্ছে করে বৃন্দাবন যেতে। হয়তো আর হবে না। রিটায়ার্ড এর টাকা থেকেই ২মেয়ের বিয়ে হয়েছে বাকি যা আছে তাই দিয়ে ছুটকীর বিয়ের জন্য আর আমাদের ভবিষ্যৎ এর জন্য রাখা। বেসরকারিকোম্পানী বেশি তো বেতন পাইনি সখ করে টাকা খরচ করে ঘুরতে যাওয়ার আর ইচ্ছে ও করে না।"পাশের ঘরে থাকা ছুটকী তাদের মেয়ে রুপসার কানে গেল তার মা বাবার কথা।সে এখন পড়াশোনা শেষ করে বেসরকারি অফিসে চাকরি করে। খুব ই অল্প বেতনের চাকরি। অনুপমা অমর বাবু কে বলল "যদি রুপসার কাছে টাকা চাই ও তো আমাদের ই মেয়ে বলো।অমর বাবু অনুপমা কে থামিয়ে বললো না না একদম ই নয় মেয়েটা সকাল ৬টায় ট্রেনে করে অফিস যায় রাত ৮টায় বাড়িতে ফেরে এত কষ্ট করছে ও আমাদের উচিত হবে না। নিজের কাজে মনোযোগ দিতে থাকে রুপসার কানে এলো কথা গুলো।যদি মা বাবার জন্য কিছু করতে পারতাম ভাবতে থাকে সে।মনে মনে লজ্জা পেল ' কোন দিন মা বাবার মনের কথা বুঝতে পারলাম না।'পরের দিন অফিস থেকে আসার পর রুপসা তার মাকে ২টো মায়াপুরের টিকিট দিয়ে বলল মা একটা কথা বলি আমার অফিস থেকে কাল মায়াপুর যাওয়ার জন্য একটা বাস ছাড়বে। তুমি আর বাবা বরং ঘুরে এসো। অনুপমা মেয়ে কে প্রশ্ন করলেন হঠাৎ তোকে দিল টিকিট,আর তুই ?রুপসা-মা ২ টো সীট খালি ছিল তাই। আমি পরে যাবো কোনদিন। তোমরা কাল ঘুরে এসো আমি বাড়িতে কাজ গুলো করে নেব এতে ২দিন ঘরেও থাকা হবে। অনুপমা অমর বাবু কে সব কথা বলেন ।অমর বাবুর বুঝতে বাকি রইলো না যে রুপসায় এই টিকিটের ব্যাবস্থা করেছে। তাদের শেষ ইচ্ছা পূরণ করার জন্য। অনুপমা কে বলেন সব কথায় কোন অফিসে মায়াপুর যাওয়ার টিকিট দেয়না। সকালেসবকিছু গোছানো হলে মা বাবাকে প্রনাম করল। অনুপমা-'মাথায় হাত দিয়ে আমরা সব জানতে পেরেছি মা। আমাদের ছুটকী অনেক বড় হয়েগেছে'। রুপসা তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে-'সারাজীবন ধরে তো অনেক কিছু করলে আমি না হয় এইটুকু করলাম মা। সাবধানে যেও আর তাড়াতাড়ি এসো তোমরা'।
Thank you for reading, please share this topic.
Comments
Post a Comment