স্ত্রী
কিগো কি হলো তোমার? শুনছ, এই? আরে মুখ দিয়ে এমন গোঁগোঁ আওয়াজ করছ কেন? রাজীব কে ধাক্কা দিতে দিতে বেড সুইচটা জ্বালিয়ে দিল সুতপা।
ঘুম ভেঙে ধড়ফড় করে উঠে বসল রাজীব। চোখেমুখে কেমন আতঙ্কের ছাপ। টিউবের আলোয় সারা ঘর ঝলমল করছে। কিছুক্ষণ ঘরের চারপাশটা দেখে তারপর সুতপার দিকে তাকিয়ে একটু ধাতস্থ হলো রাজীব।
- না কিছু হয় নি। তুমি শুয়ে পড়।
রাজীব পাশের টেবিল থেকে জলের বোতল নিয়ে ঢকঢক করে বেশ কিছুটা জল গলায় ঢালল। তারপর বেডসুইচ অফ করে শুয়ে পড়ল। মনে মনে একটু হাসি পেল রাজীবের। আজ সকালে ঘরের ফার্নিচারগুলোর জায়গা বদল করা হয়েছে আর ড্রেসিং টেবিল আর সোফায় কভার পরানো হয়েছে। মাসখানেক আগে দেখা একটা ভুতুড়ে মুভিতে নায়ক এরকম সাজানো গোছানো ভুতের বাড়িতে আটকে পড়েছিল। মাঝরাতে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে নাইট বাল্বের আবছা আলোয় নিজের ঘরটাকেই চিনতে পারে নি রাজীব আর সেই ভুতের সিনেমার স্মৃতি চলে এসেছিল মনে। উফ্ কি ভয়টাই না পেয়ছিল সে, ভয়েতে দম বন্ধ হয়ে আসছিল তার। ভাগ্যিস সুতপা তাকে ঠেলা দিয়ে..., কিন্তু সুতপা....
আড়ষ্ট হয়ে গেল রাজীব, তার শিরদাঁড়া বেয়ে এক ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল। এই তো দুসপ্তাহ আগে তার প্রিয় সুতপা তাকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। তাদের বিয়ের প্রায় সাত বছর পর কনসিভ করেছিল সুতপা। কিন্তু প্রেগন্যান্সি জনিত কমপ্লিকেশন ছিল। বাচ্চা, মা কেউ বাঁচে নি।
দাদা বৌদি এতদিন থেকে আজ বিকেলে দেশের বাড়ি ফিরল। আর সকালে ফার্নিচারের জায়গা বদল করে বৌদি বলল,
- এতো মনমরা হয়ে আর থেকো না ভাই, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর সামনের সপ্তাহে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কিছুদিনের জন্য গ্রামের বাড়ি চলে এসো। ততদিনের জন্য আসবাবগুলো একটু অন্যরকম ভাবে রাখছি, তোমার মনটা একটু পাল্টাবে।
তখন এতো ভয় পেয়েছিল রাজীব, যে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছিল। রাজীবের আজ বছর দুয়েক হার্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে। আরো কিছুসময় এরকমভাবে থাকলে কী হতো কে জানে। আগেও দুতিন বার মাঝরাতে এরকম ভয় পেয়েছে সে, আর সুতপা ওকে ঠেলে ঠেলে জাগিয়েছে। সুতপা তার স্ত্রীর কর্তব্য মৃত্যুর পরও পালন করল।
শত প্রিয় মানুষ হলেও মৃত্যুর পর তাকে দেখা গেলে ভয় হয়, কিন্তু সুতপাকে সে আর ভয় পাবে না, সুতপা তো তার প্রাণদাত্রী। ওকে একবার জড়িয়ে ধরার লোভে রাজীব পাশ ফিরে তাকাল, কিন্তু ফাঁকা বিছানায় সে একা। লাইট জ্বেলে সারা ঘরে আর কোথাও নিজের স্ত্রীকে দেখতে পেল না সে।
- "সুতপা.., সুতপা... আর একবার আমার কাছে এসো" বলে কেঁদে উঠল রাজীব
Comments
Post a Comment