উচ্চাশা"
---শুভংকর বাবু জেলা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার, প্রভাকর বাবু,শুভংকর বাবুর কলিগ, দু জনের মধ্যে নিবিড় বন্ধুত্ব,কর্মক্ষেত্রের মধ্যে তাঁদের বন্ধুত্ব সীমাবদ্ধ,কেউ কো্নো দিন, একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত করেন নি।
শুভংকর বাবু মানে শুভংকর সেন, নতুন বাড়ি তৈরী করেছেন, আজ গৃহপ্রবেশ করবেন,সেই উপলক্ষে একটা ছোটো খাটো অনুষ্ঠান, সেই অনুষ্ঠানে শুভংকর বাবু,বন্ধু প্রভাকর বাবুকে, মানে প্রভাকর সামন্তকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, সেই আমন্ত্রন রক্ষা করতে,প্রভাকর বাবু,শুভংকর বাবুর দেওয়া ঠিকানায় এসেছেন, শুভংকর বাবু প্রভাকর বাবুকে আপ্যায়ন করে বৈঠক খানায় নিয়েএলেন, পাশে সোফায় বসার ব্যবস্থা করে,প্রভাকর বাবুকে একটু বিশ্রাম করতে বলে, বাড়ির ভিতরে চলে যা্ন।
প্রভাকর বাবু। বৈঠক খানায় বসে দেওয়ালে টাঙানো নানা ধরনের রুচিসম্মত ছবি গুলো দেখেন আার অবাক হন, কি অপরুপ লাগছে ছবি গুলে প্রভাকর বাবু ভাবেন প্রভাকরের রুচিবোধ আছে,তার রুচি বোধের প্রশংসা করেন আপন মনে।
অনুষ্ঠানের জন্য রান্নাবান্না যারা করছেন,তাদের কাজকর্ম বুঝিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ পরে বৈঠক খানায় ফিরে আসেন,সংগে আসে শুভংকর বাবুর একমাত্র মেয়ে সুজাতা,সুজাতা চায়ের ট্রেতে চা এনে টি-টেবিলের উপরে রাখে,প্রনাম করে প্রভাকর বাবুকে, প্রভাকর বাবু আপাদমস্তক দেখে নেয় সুজাতার, পাশে থাকা চেয়ারে বসতে বলেন, চায়ে চুমুক দিতে দিতে সুজাতাকে কয়েকটি প্রশ্ন করেন প্রভাকর বাবু, প্রতি প্রশ্নের যথাযত উত্তর দেয় সুজাতা কোনো জড়তা ছাড়াই,। কতই বা বয়স সুজাতার, এগারো বারো বছর হবে, তার কথায় বার্তায় আচার আচরণে, চলনে বলনে, মনে মনে সুজাতাকে ভালো লেগে যায় প্রভাকর বাবুর, তিনি ভাবেন এই মেয়েটির ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল!
-- বুঝলে শুভংকর একবার ভাবছি এটি তোমার মেয়ে, আবার ভাবছি , না কাজের মেয়ে হবে হয়তো।
শুভংকর বাবু জানতে চান,
---কেন,কাজের মেয়ে ভাবলে কেন?
--- ভাবলাম এই কারনে, মেয়েটি তোমার সাথে সাথে চায়ের ট্রে নিয়েঢুকলো,, তোমার মেয়ে বলে পরিচয় ও দিলে না বলে। সত্যি কথা বলতে কি, কাজের মেয়ে ভাবলেও মন থেকে একদমই মেনে নিতে পারছিলাম না,ওর ব্যবহার ও অবয়ব আমার কাছে ঠিক কাজের মেয়ের মত লাগেনি, হুবহু তোমার জেরক্স!
---নতুন এসেছি,তাছাড়া আগে যে। কাজের মেয়েটি ছিল তার বিয়ে হয়ে গেছে, তাই কাজের লোক আাসতে এখনো কিছু দিন দেরি হবে।
----তাহলে তার বিয়েতে তোমার ভালোই খরচ হয়েছে?
হ্যা তা হয়েছে!. আমি তার মাকে ডেকে বলে ছিলাম "মেয়ের বিয়ে দিচ্ছ,আমার তো কিছু খরচ বহন করতে হবে! মেয়ে টির মা বলেছিল,, তাহলে বেশি কিছু না আপনি জামাই এর মোটর বাইকটা কিনে দেবেন,,আজ কালকার ছেললেরা রাখার জায়গা না থাকলেও গাড়ির দাবি তাদের থাকেই!তাই তার কথা মত গাড়ির টাকা সহ দশ হাজার দিয়েছিলাম, কারণ ছোটো বেলা থেকে আছে, ওকে আমার নিজের মেয়ে মত দেখতাম,!
---খুব ভালে কাজ করেছ, এমন টি কজন করে বলো! তাহলে কাজের লোক একটা ঠিক করো, গৃহস্থের বাড়িতে কাজের লোক না। থাকলে ঠিক মানায় না
--- কাজের লোকের একটা যোগাযোগ করেছি, সে অবশ্য অন্য বাড়িতে কাজ করছে হুট করে চলে আসতে চাইলে,আসতে পারবে না।
----কেন, কি সমস্যা?
---- ওদের নাকি সংগঠন আছে, কাজের লোক সমিতি আছে, সমিতিতে জানাতে হয়, সমিতি যদি অনুমতি দেয় তো আসতে পারবে।
--- কাজের লোক না থাকলে, খুবই অসুবিধা! ৃৃমেয়ে টি কি জানালো?
---সমিতিতে জানিয়েছে, সমিতি তাকে আমার এখানে পাঠাতে রাজি আছে!৷ তবে যে বাড়িতে সে কাজ করছে সে খানে এক জন কে না পাঠানে পরযন্ত আসতে পারবে না,তবে মেয়েটি জানিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি ই একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
প্রভাকর বাবু সুজাতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
----মা, তুমি কিছু মনে করোনা বোঝার ভুল হতেই পারে!
---না,না, জ্যেঠু, আমি কিছুই মনে করিনি,ভুল তো হতেই পারে! মানুষ মাত্রই ভুল করতে পারে, তাই এম এ পাশ হোক আর মূর্খ হোক!
---তা মা, সুজাতা, তুমি কোন ক্লাসে পড়াশোনা করছো?
---ক্লাস সিক্সে পড়াশোনা করি।
--- কত জন ছাত্র ছাত্রী আছে তোমার ক্লাসে ?
--- ছাত্র নেই, গার্লস স্কুল, দু শো জন ছাত্রী আছে।
--- ওঃ তাহলে তো সেকসান আছে ?
--- হ্যা সেকসান আছে, আমি"এ" সেকসানে, রোল নম্বর "এক" চল্লিশ জন করে সেকসানে,।
এমন সময় সুজাতার মা প্রভাবতী দেবি,রান্না ঘর থেকে সুজাতাকে ডেকে পাঠান,সুজাতা প্রভাকর বাবুর কাছ থেকে যাওয়ার অনুমতি মিয়ে, মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যায়।
----দেখে,শুভংকর,তোমার মেয়ের লক্ষন খুবই উজ্জ্বল, তবে-------!
---তবে কি৷?
---- না,মানে সুজাতার দিকে ভালো৷ ভাবে লক্ষ্য রাখবে!
----চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, প্রতি বিষয়ের উপর একজন করে গৃহশিক্ষক রেখেছি,
---ঠিক আছে,তবে এমন কিছু করোনা যাতে সুজাতার উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়!
না,না, তাই কি!ওর মা এম এ গোল্ডমেডেলিস্ট কোলকাতা ইউনিভার্সিটির,সে ভুল ও নিচ্শই করবে না আর আমি তো না ই।
---- তোমার স্ত্রী এম এ গোল্ড মেডেলিস্ট! তাহলে তো ভালো চাকরি হওয়ার কথা!
--- হয়েছিল, কিন্তু অফিস বস এর কুনজরের কারণে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন, এবং প্রতিজ্ঞা করেন জীবনে আর কোনো চাকরি করবেন না!
---- তাহলে তো সোনায় সোহাগা,চালিয়ে যাও! তবে আবারো বলছি, সজাতর দিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য রেখো!
----- চালিয়ে তো যাচ্ছি, এখন সুজাতা কত দূর কি করতে পারবে সেটাই দেখার -- চলো ও দিকে খাওয়ার ব্যবস্থা সব পাকা!
---- চলো তবে!
খাওয়া শেষ হলে, প্রভাবতি দেবিকে বৈঠক খানায় ডাকেন শুভংকর বাবু, প্রভাকর বাবুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
---- প্রভা, এদিকে একবার এসো তো,কাজের চাপে এর আগে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও হয়নি, এখন সেই কাজটা করি।
তাওয়েলে হাত মুছতে মুছতে বৈঠক খানার দরজার কাছে এসে দাঁড়ান প্রভাবতি দেবি।
--- ওখানে কেন দাঁড়িয়ে, ভিতরে এসো।
প্রভাবতি দেবি ভিতরে এসে,প্রভাকর বাবুকে নমস্কার জানান।প্রভাকর বাবু নমস্কার বিনিময় করে হাসি মুখে বলেন,
---আপনার সম্পর্কে আগেই সব জেনেছি - শুনেছিে,।কাজের লোক না থাকায় আপনি একটু চাপে ছিলেন বলে মনে হচ্ছে? মৃদু হেসে প্রভাবতি দেবি বলেন
---সে তো একটু হবেই,অস্বীকার করার কোনো যায়গা নেই। চা আনতে বলি!
---- না,না, এখন আর চা নয়!৷ দাঁড়িয়ে কেন বসুন!প্রভাবতি দেবি, পাশে থাকা চেয়ার টা নিয়ে বসে পড়েন।
----আপনি তো সজাতার মা, আপনাকে একটা কথা বলি, মায়েরা কিন্তু সন্তানের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করে এবং এটাাই স্বাভাবিক। তবে এমন আশা করবেন না, যাতে ওর ওপর বেশি দেওয়া হচ্ছে বলে মনে না করে। সেদিকে একটু ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখবেন।ভুল হলে কিন্ত পস্তাতে হতে পারে
অবশ্য এ ব্যাপার টা আমার থেকে আপনি ভালো জানেন।
একটু হেসে প্রভাবতি দেবি বলেন
---ঠিক আছে আপনার উপদেশ মত কাজ করব। কিছু মনে করবেন না। আপনি কি জ্যোতিষ শাস্ত্র জানেন ?
--- না তেমন কিছু না, জ্যোতিষ শাস্ত্র পড়তে পড়তে চাকরি টা পেয়ে যাই, চাকরির সুযোগ টা হাত ছাড়া করলাম না!তাই আর পড়া হয়নি,সামান্য কিছু জানতে পারি - বলতে পারি, এই আর কি! তো ঠিক আছে, ভালোলাগলো আপনাদের যায়গা পরিবেশ আপ্যায়ন আমাকে মুগ্ধ করেছে, আবার দেখা হবে, বাসায় ফিরতে হবে, এখন উঠি!
---- উঠবেন কেন, থেকে যান, এলেন কিন্ত ব্যস্ততার কারণে, কথা বেশি হলনা থাকলে ভালো লাগতো।
--- ধন্যবাদ, খুব ভালো লাগলো ভালো থাকবেন,চলি শুভংকর!
---- ঠিক আছে, চলো গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিই,।
উভয়ে চলে যায়।প্রভাকর বাবু কে বিদায় দিয়ে ফিরে আসেন শুভংকর বাবু।ফিরে আসতেই প্রভাবতি দেবি জানতে চান,
-- প্রভাকর বাবু্ যা বললেন তা কি সাত সত্যি?
----যত দূর জানি ও বাজে কথা বলে না তাছাড়া ও যা বলে বেশির ভাগ মিলে যেতে দেখেছি ও শুনেছি। তবে সুজাতার ক্ষেত্রে কত দুর সত্যি হয়,সেটা সময়ই বলবে।তবে, ও এক বার তবে বলে থেমে
গেলো কেন জানিনা।
আনন্দে উদ্বেল প্রভাবতী দেবি,মেয়েয় ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলতার কথা শুনে।
-----দেখো আমাদের তো আর কোনো সন্তান নেই, আর হবেও না।সুজাতাকে যে কোনো মূল্যে মানুষের মত
মানুষ করে গড়ে তুলতে হবেই
-----৷ আমিও ভাবছি প্রভা, সুজাতাকে মানুষের মত মানুষ করতে, যা কিছু করতে হয় করব, যত দুর যেতে হয় যাৃব!
-----এখন থেকে সুজাতার প্রতি বিষয়ের উপর। অনন্তত দুজন করে গৃহশিক্ষক দিতে হবে! ভীতশক্ত করতে হবে,।আচ্ছা সুজাতাকে কোন লক্ষ্য।নিয়ে এগুতে হবে, ডাক্তার না আই পি এস?
----তুমিই বলো কোন লক্ষ্য নিয়ে পড়াতে চাও।
-----ওপাড়ার ভ্যানচালক। সনাতন বিশ্বাসের মেয়ে আই পি এস হয়েছে,আমারও ইচ্ছা সুজাতা আচই পি এস হোক।
---ঠিক আছে, তোমার মতে আমিও একমত হলাম,
----এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে পড়াশোনা করাতে হবে।আমি তো বাইরে থাকি,তুমি ওর গাইড হিসাবে কড়া নজর রাখবে,যেন পড়াশোনায় কোনো প্রকার গাফিলতি না করে। করলে কিন্তু আমাদের আশা পুরন নাও হতে পারে!
---- এধরনের অলক্ষুণে মন্তব্য করো না তো, ওকে আমি আই পি এস অফিসার করেই ছাড়বো, এটা আমার প্রতিজ্ঞা।
-----তুমি বুঝবে ভালো, ও আবার এত কড়াকড়ি, এত চাপ মেনে নিতে পারবে কি না!
-----বোঝাতে হবে,পারবে না কেন? নিশ্চয়ই পারবে!সনাতন বিশ্বাস ভ্যানচালিয়ে খায়,সনাতনের মেয়ে পারলে সুজাতাও পারবে!আর ওকে পারতেই হবে।এখন থেকে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাব আমি!
------ আমি বাইরে থাকি, তুমি ওর পাশে থাকো সতরাং সব থেকে বড় দায়িত্ব তোমার, আর তোমরা মা মায়েরাই হলো সন্তানের প্রধা্ন শিক্ষক!
-----তুমি ও সব নিয়ে ভেবনা,বিষয় টা আমার হাতে
ছেড়ে দাও!
----- প্রভাকর কি বলেছিল মনে আছে তো, আবার এমন কিছু করো না যার। ফলে সুজাতা মানসিক চাপে না পড়ে যায়
----- বলছি তো ঐ সব নিয়ে তুমি একদমই চিন্তা করোনা,আমি মা আমি বুঝি,আমার সন্তান্ কতটা চাপ সহ্য করতে পারবে,তাছাড়া আমি একজন এম এ পাশ মা।
ভীষণ কড়াকড়ি, দারুণ চাপের মধ্যে চলে যায় একটা বছর, মায়ের এত কড়া কড়াকড়ি এত চাপ সুজাতা মেনে নিতে পারে না,বন্ধু বান্ধব দের সাথে মেলামেশার সুযোগ দেওয়া হয় না, দেওয়া হয় না কোনো প্রকার খেলাধূলা, আমদ প্রমোদ, বিনোদনের সুযোগ, প্রভাবতি দেবির একটাই কথা, খাওয়া আর পড়াছাড়াঅন্য কো্নো ধ্যান ধারনা যেন সুজাতার মাথায় না আসে!এই ভাবে সুজাতা যেন দিনের পর দিন বোর হয়ে থাকে, মায়ের কড়াচাপ, কড়া শাসন যেন সুজাতাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে নির্মম ভাবে আঘাত করে। নিজের প্রতি নিজের ঘৃনা জন্মাতে থাকে,,, মায়ের কড়া কঠিন বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছা করে সুজাতার, এক দিন বেরিয়ে ও পড়ে মায়ের অগোচরে অজানার উদ্দেশ্যে, উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে হাঁটতে হাঁটতে এসে দূরে একটা বট গাছের তলায় বসে বিশ্রাম করে।হাজারো চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে সুজাতার,কোনো এক চিন্তার জগতে হারিয়ে যায় সুজাতা! মায়ের বলা কথা গুলো, মায়ের দওয়া চাপ আর কড়া শাসন যেন তার স্মৃতির কোনে আঘাত করে।
ঐ রাস্তা দিয়ে আসছিল সুজাতার ক্লাস মেট, জবা, জবা রায়, সুজাতাকে এ ভাবে মন মরা অবস্থায় বসে থাকতে দেখে,জবা পিছন থেকে এসে সুজাতার পিঠে হাত রেখে জানতে চায়।এখানে একা বসে কি করছো সুজাতা ?
জবার ডাকে সম্বিৎ ফিরে পায় সুজাতা, ম্লান মুখে জবাব দেয় সুজাতা,
--- কি আর করবো! দু চোখ ভরে যায় জলে,জল গড়িয়ে পড়ে দু চোখ দিয়ে।
----ম্লান মুখে, জল ভরা চোখে একা এই বট তলায় বসে আছিস কেন? কোনো সমস্যা হলে, বা থাকলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস!
----সমস্যা তো বটেই,না হলে ------
---- কি এমন সমস্যা, আমি তোর বন্ধু,বন্ধু হিসাবে আমার সাথে অন্তত শেয়ার কর,দেখি কোনো সমাধান করতে পারি কি না
----মায়ের ূদেওয়া। চাপ, আর কড়াশাসন, বুঝলি,মায়ের দেওয়া চাপ, আর কড়া শাসন আমি সহ্য করতে পারছি না। মায়ের মুখে শুধু একটাই কথা , আই পি এস হতে হবে!
---- আই পি এস কি,অবাক হয়ে
জা্নতে চায় জবা।
---- জানিনা,আই পি এস কি! খায় না মাথায় দেয়। বুঝলি জবা, আমার কারণে হয় তো তোরা একদিন স্কুলে ছুটি পেতে পারিস!
উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। জবা হাসি জড়ানো গলায় বলে।
---- কি, তোর কারণে স্কুল ছুটি! কি বলছিস তুই পাগলের মত? ছুটি হয় কোনো মহান ব্যক্তির জন্মও। মৃত্যু দিনে, তুইএমন কি মহা্ন ব্যক্তি যে তোর কারণে স্কুল ছুটি হবে?
-----হবে,আমি বলছি হবে, সেদিনের আর বেশি দেরি নেই।
--- তোর হেয়ালি পনা কথা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না
----বুঝবি,বুঝলি বুঝবি,সেই ভীষণ দিনটি তোদের জন্য অপেক্ষা করছে!
এদিকে সুজাতার মা, সজাতাকে সারা পাড়া খুঁজে খুঁজে হয়রান! জনে জনে জিজ্ঞেস করে সুজাতা কোথায় বলতে পারে
কি ্না কেউ
কোনো জবাব দিতে পারে না। অবশেষে সুজাতার সম বয়সী সেরিনা মানে সেরিনা খাতুন জানায় মনমরা,ভারাক্রান্ত মনে তার পাশ কাটিয়ে সামনের ঐ বড় রাস্তার দিকে তাকে হেঁটে যেতে দেখেছে।শশব্যস্ত হয়ে উদভ্রান্তের মতো ছুটে যান প্রভাবতি দেবি ঐ রাস্তা
বরাবর, তিনি দেখতে পান দূরে একটি বট গাছের তলায় দুটি মেয়ে। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেন, হ্যা সুজাতাই,মুহুর্তের মধ্যে ছুটে যান প্রভাবতি দেবি সেখানে।
----এই সুজাতা তুই এখানে৷? আর আমি তোকে সারা পাড়া খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে যাচ্চি,একবার তো আমাকে বলে আসবি! "একবার তো আমাকে বলে আসবি " লাইন টা সুজাতাকে দারূন ভাবে আঘাত করে, ব্যথা দেয়, সুজাতা মনে মনে বলে,বললে কি। আর আসতে দিতে মা,আমি তোমাকে চিনি না!
----- কোনো কথার উত্তর দিচ্ছিস না যে বড়ো! চল খাবি চল,সেই গত কাল সকাল থেকে দানাপানি তোর পেটে যায়নি! আর এখন প্রায় সকাল দশটা বাজে,এখনো মুখে কিছু দিলিনা! চল আয়, আর এই। মেয়েটি কে?
সুজাতার জবাব দেওয়ার আগে, জবা বলে। আমি জবা, জবা রায়,সুজাতা আমার ক্লাস মেট।
--- তুমিও এসো মা, তুমি এলে হয়তো একরটু আনন্দ পাবে।
----না, মাসিমা,দোকানে এসেছিলাম, কিছু দরকারি জিনিস পত্র কিনতে,বাড়িতে কিছু আত্মীয়স্বন আসবে,ওর সাথে দেখা হয়ে গেলো তাই ----, আমি। আসি মাসি মা, চলে যায় জবা। সুজাতার হাত ধরে বাড়ির পথে অগ্রসর হন মা মেয়ে দুজন
।বাড়িতে এসে সুজাতা সরাসরি চলে যায় তার পড়ার ঘরে, প্রভাবতিদেবি খাওয়ার জন্য সুজাতাকে ডাকেন, ম্লানমুখে সুজাতা জানায়
---খিদে নেই, পরে খিদে লাগলে খাব।
----- পরে কেন, গত কাল সকাল থেকে না খেয়ে আছিস, আয় মা আয়, খেয়ে নে, খাওয়ার ব্যাপারে রাগ করতে নেই।
---- বলছি তো পরে খিদে হলে খাব।ঘ্যানোর ঘ্যানোর ভালো লাগেনা!
প্রভাবতি দেবি বেশি কিছু না বলে চুপ করে যান,এবং চলে যান।
সুজাতা চেয়ারে বসে, খাতা কলম নিয়ে , মাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কি যেন লেখে, লেখা শেষে,লেখা কাগজ টা টেবিলের উপর থাকা বই এর ভিতরে রাখে,
প্রভাবতি দেবি আবার আসেন সুজাতাকে বলেন্
----গতকাল সকাল থেকে এখন পর্যন্ত তোর পেটে কিছু
পড়েনি,এখন প্রায় বেলা সাড়ে বারোটা বাজে,এখনো তোর খিদে হয় নি এটা কি আমাকে বিশ্বাস করতে হবে! যা হয় কিছু একটু মুখে দে
মা,
এবার যেন একটু রেগে যায় সুজাতা, অন্যদিকে ফিরে বলে।
-----বলেছিতো পরে খিদে লাগলে খাব, কেন বার বার ঘ্যানোর ঘ্যানোর করছো!
নিজেকে সামলে নিয়ে সুজাতা মাকে বলে-
--- মা আজ বিকেলে, বিশেষ দরকারে, একটু সমিত্রাদের বাড়িতে যাব, যদি অনুমতি দাও তো -----
-----দেখ,সুজাতা, পড়াশোনা ফোলে রেখে সমিেত্রার বাড়ি কেন? তারা কি তোর বাড়িতে আসে? তাছাড়া ঐ সময় টা পড়ার মধ্যে থাকলে অনেক কাজ হবে।
----- মা,তুমি তো বললে" তারা কি তোমার বাড়িতে আসে" তারা শুধু তোমার কারণে আমার বাড়িতে আসেনা,উচ্চআশা তোমাকে নিষ্ঠুর করে ফেলেছে!
------কেন, আমি তাদের কি করেছি, আমি তাদের আসতে বারণ করেছি? না কটু কথা বলেছি!
----- নিজের বুকে হাত রেখে একটুভেবে দেখো মা!
----- আমি যা করেছি,তোর পড়াশোনার স্বার্থে করেছি,বুঝিনা বাপু
তোর রকম সকম! পড়াশোনা ফেলে রেখে সুমিত্রার বাড়ি! যতসব! যাবে যাও,এখন দুৃুমুঠো খেয়ে৷ আমাকে উদ্ধার করো!
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল তখনো অভুক্ত সুজাতা, মায়ের কথা অমান্য করে,, কিছু না খেয়ে, সুমিত্রার বাড়ি যাওয়ার অনুমতি চায় সুজাতা। প্রভাবতিদেবি সুজাতার আচরণএকদই ভালো লাগছে না সে ভাবে সজাতার আচরণ কোনো বিপদ সংকেত নয় তো!
----- কি ভাবছো মা, আমি কি যেতে পারি? সময় চলে যাচ্ছে!
----অনিচ্ছায় অনুমতি দিলেন,যাও,তবে তাড়াতাড়ি ফিরবে! অনর্থক সেখানে সময় নষ্ট করবেনা!
-----হ্যা,মা তাড়াতাড়ি ফিরে আসার জন্য যাচ্ছি, তবে-----!
যাঃ! আর ধ্যান করতে হবে না, সামনে কিন্তু হাফইয়ারলি পরীক্ষা ব্যাপারটা মনে থাকে যেন!একদমই দেরি করবি না!
------ না, মা, একদমই দেরি করব না, মাথা নীচু করে নত জানু হয়ে মায়ের পায়ে হাত রেখে প্রনাম করে সুজাতা
----দেখো,আদিখ্যেতা দেখো, যাচ্ছে, কিছুক্ষণের জন্য বন্ধর বাড়ি, প্রনামের বাহার দেখো, যা বলেছি মনে থাকে যেনো। আবারও বলছি সামনে হাফইয়ারলি পরীক্ষা!, একদম দেরি করবি না মনে রাখিস আই পি এস তোকে হতেই হবে!
মায়ের দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ,, তার পর কি যেন বলতে গিয়ে চোখ ভরে যায় জলে!
প্রভাবতি দেবি সুজাতার কান্না
দেখে বলেন,-
--- কি হলো কাদঁছিস কেন, কান্নার মত কি এমন বলেছি বুঝিনা বাপু!
কোনো কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে যায় সুজাতা,বারাসাত গামী ট্রেনটা হুইসিল দিয়ে এক পেট জীবন্ত মানুষ নিয়ে দুর্বার গতিতে ছুটে আসছে হাসনাবাদ থেকে।সুজাতা প্রান পণ ছুটতে লাগলো,না হলে ট্রেনটা হয়তে নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। ছুটতে ছুটতে ট্রেন লাইনের কাছে এসে নিজেকে এলিয়ে দেয় ট্রেন লাইনের ওপরে। যারা দেখতে পেলো তারা বাঁচানোর জন্য ছুটে এলো, কিন্তু ততক্ষনে ট্রেন টি সুজাতাকে ছিন্নভিন্ন করে চলে গেছে! যারা বাঁচাতে এসেছিল তারা সুজাতার দেহ দেখে চিনতে পারলো না!পারার উপায়ও ছিল না। পিষে গেছে তার সমস্ত শরীর,
ট্রেন লাইনের ধারে বহু লোকের ভীড় দেখে কি হয়েছে জানতে আসে সুমিত্রা, চুড়িদার দেখে সুমিত্রার বুঝতে বাকি থাকে না, এটা তার বান্ধবী সুজাতার দেহ,হাহাকার করে ওঠে সুমিত্রা! কান্না ভেজা গলায় বলতে থাকে, এতুই কি করলি সুজাতা! কান্নায় ভেঙে পড়ে সুমিত্রা!উপস্থিত বাঁচাতে আসা জনতা জানতে চায় ট্রেনে কাটা পড়া মেয়েটিকে সে চেনে কি না কান্না ভেজা জড়িত গলায় জানায়।
--- শুধু চিনি। না, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ক্লাস মেট।এক মাস আগে এই চুড়ি দার টা আমিই পছন্দ করে ওকে কিনতে সাহা্য্য করে ছিলাম! সুজাতার দেহের পাশে পড়ে থাকা ছোট্ট একটি ভ্যানিটি ব্যাগ দেখতে পায় সুমিত্রা, সেটা হাতে নিয়ে খুলে দেখে,একটাকার একটা কয়েন, এবং সুজাতার হাতের লেখা একটি চিরকুট তাতে লেখা, "যখন তোমরা এই চিরকুটটি হাতে পাবে, তখন আমি তোমাদের ছেড়ে৷ অনেক দুরে কোনো এক অজানা অচেনা অপরিচিত না ফেরার দেশে।আমার এই পরিনতির জন্য কেউ দায়ী নয়! -
👍👍👍
ReplyDelete🌹🌹🌹🌹🌹
ReplyDelete